ব্যবসা এবং বিনিয়োগের মূলনীতি | সফল হবার টিপস
শেয়ার বাজার, ব্যবসা এবং বিনিয়োগ || Share Market, Business, and Investment
বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে
বিনিয়োগ !
১. শেয়ার বাজার কী?
শেয়ার বাজার একটি অর্থনৈতিক বাজার যেখানে কোম্পানির শেয়ার বেচাকেনা হয়।
এখানে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনে সেই প্রতিষ্ঠানের আংশিক মালিক
হয়ে যান। শেয়ার কেনা মানে আপনি কোম্পানির মালিকানা ভাগে অংশগ্রহণ করছেন।
শেয়ার বাজার সাধারণত দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত—প্রাথমিক বাজার এবং গৌণ
বাজার। প্রাথমিক বাজারে নতুন শেয়ার প্রকাশিত হয় এবং গৌণ বাজারে আগের শেয়ারগুলির লেনদেন
হয়। বাংলাদেশে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) শেয়ার
বাজারের প্রধান প্ল্যাটফর্ম।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী লাভ অর্জনের সুযোগ থাকে,
তবে এর সঙ্গে ঝুঁকি ও থাকে। সঠিক জ্ঞান ও পরিকল্পনা ছাড়া শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বিপজ্জনক
হতে পারে, তাই শুরু করার আগে ভালোভাবে বাজার সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
২. বিনিয়োগের প্রকারভেদ
শেয়ার বিনিয়োগ
শেয়ার বিনিয়োগ হলো সাধারণত কোম্পানির একটি আংশিক মালিকানা কেনা। শেয়ার
কিনলে আপনি সেই কোম্পানির লাভের অংশ পেতে পারেন। শেয়ারের দাম কোম্পানির পারফরম্যান্স,
বাজারের চাহিদা ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কারণের উপর নির্ভর করে ওঠা-নামা করে। শেয়ার বিনিয়োগ
দীর্ঘমেয়াদী লাভের একটি শক্তিশালী উপায় হতে পারে।
বন্ড এবং মিউচুয়াল ফান্ড
বিনিয়োগের আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড। বন্ড
হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে সুদের মাধ্যমে ঋণ ফেরত পাওয়ার প্রতিশ্রুতি। অন্যদিকে, মিউচুয়াল
ফান্ড একাধিক বিনিয়োগকারীর অর্থ সংগ্রহ করে শেয়ার ও বন্ডে বিনিয়োগ করে। এটি নিরাপদ
ও ঝুঁকি হ্রাসকারী বিনিয়োগের উপায়।
৩. ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক পদক্ষেপ
ব্যবসা শুরু করা বেশিরভাগ মানুষের জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত। এর জন্য প্রয়োজন
সঠিক পরিকল্পনা, ধারণা এবং অর্থায়ন। প্রথমে একটি উপযুক্ত ব্যবসার ধারণা নির্বাচন করা
উচিত, যা আপনার দক্ষতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরবর্তী ধাপ হলো একটি ব্যবসা পরিকল্পনা
তৈরি করা, যেখানে লক্ষ্য, বাজার বিশ্লেষণ, অর্থায়ন প্রয়োজন, এবং কৌশল উল্লেখ থাকবে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আইনগত প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ করতে হবে। ব্যবসা রেজিস্ট্রেশন,
লাইসেন্স, কর ইত্যাদি বিষয়গুলো শুরুতেই ঠিক করে নিতে হবে। এছাড়া বাজারে প্রতিযোগিতা
সম্পর্কে জেনে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
৪. শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের কৌশল
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু প্রাথমিক কৌশল অবলম্বন করলে ঝুঁকি
কমানো এবং লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রথমত, গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোম্পানি,
তার আর্থিক প্রতিবেদন এবং বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা উত্তম। এই পদ্ধতিকে ডাইভারসিফিকেশন
বলে, যা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা নিরাপদ,
কারণ শেয়ারের বাজারের উঠানামা দীর্ঘ মেয়াদে সাধারণত স্থিতিশীল হয়ে আসে।
৫. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সময় ঝুঁকি থাকলেও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তা
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো বিনিয়োগের
বৈচিত্র্য। বিভিন্ন খাতে এবং বিভিন্ন প্রকারের সম্পদে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
অন্যদিকে, শেয়ার বাজারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাইবার নিরাপত্তার ওপর
জোর দেওয়া জরুরি। নিজের একাউন্টের তথ্য নিরাপদ রাখতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার
এবং নিয়মিত একাউন্ট মনিটর করা উচিত।
৬. দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের সুবিধা
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হলো এমন একটি কৌশল যেখানে বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ
সময়ের জন্য তাদের সম্পদ ধরে রাখে। এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হলো বাজারের সাময়িক ওঠানামার
ওপর নির্ভর না করে স্থিতিশীল ও ক্রমবর্ধমান লাভ অর্জন করা।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের একটি প্রধান সুবিধা হলো এটি কম ঝুঁকির প্রস্তাব
দেয়। বাজারের অস্থিরতা স্বল্প মেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে বাজার
সাধারণত স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তাছাড়া, সুদের হার, মুনাফার অংশ, এবং পুঁজির বৃদ্ধি দীর্ঘ
সময়ে সমষ্টিগতভাবে বড় পরিমাণ লাভ প্রদান করে।
এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি কম কর প্রদান করতে পারেন,
কারণ অনেক দেশে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের হার স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের
চেয়ে কম।
৭. বাংলাদেশে শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের শেয়ার বাজার, বিশেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), দেশের
অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উপাদান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শেয়ার বাজারে উন্নতি লক্ষ করা
গেছে, তবে তা এখনও অস্থির।
বর্তমান সময়ে সরকার ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার বাজারের স্থিতিশীলতা
নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং
সঠিক নিয়ম মেনে লেনদেন পরিচালনার জন্য একাধিক নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
তবে বিনিয়োগকারীদের এখনও সতর্ক থাকতে হবে, কারণ বাজারে প্রচুর অস্থিতিশীলতা
রয়েছে। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার আগে সঠিক পরামর্শ এবং তথ্য সংগ্রহ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮. শেয়ার বাজারে সফলতার টিপস
শেয়ার বাজারে সফল হতে হলে কিছু নির্দিষ্ট টিপস অনুসরণ করা উচিত। প্রথমত,
বাজারের প্রবণতা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। বাজারের
অস্থিরতা ও অন্যান্য উপাদানগুলো নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, একক খাতের ওপর নির্ভর না করে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা উচিত।
এটি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তৃতীয়ত, সংযত মনোভাব বজায় রাখা প্রয়োজন। বাজারের সাময়িক
ওঠানামায় আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি বা কেনার পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে অটল থাকা
উত্তম।
শেয়ার বাজারে সাফল্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধৈর্য। দ্রুত লাভের
চিন্তা না করে ধৈর্য ধরে বিনিয়োগ করা লাভজনক হতে পারে।
উপসংহারঃ-
বাংলাদেশের শেয়ার বাজার এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রটি বিস্তৃত এবং সম্ভাবনাময়।
সঠিক জ্ঞান, কৌশল এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করলে বিনিয়োগকারীরা ভালো লাভ অর্জন করতে
পারেন। তবে ঝুঁকির বিষয়টি সবসময় মাথায় রাখতে হবে এবং তা হ্রাস করার উপায় খুঁজে নিতে
হবে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো নির্দিষ্ট
লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী বাজার বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করা। সঠিক তথ্য
ও গবেষণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে এবং লাভবান হতে সক্ষম
হবেন।
এই নিবন্ধটি আপনাকে শেয়ার বাজার, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জগতে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে। আশা করি এটি আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।